সংরক্ষণ করুন
  • New List
আরও
    সংরক্ষণ করুন
    • New List
96322/রবিউল আউয়াল/1445 , 07/অক্টোবর/2023

যে রোগীনি খ্রিষ্টান নারী ডাক্তারের সাথে কথা বলার সময় তার জন্য দোয়া করেন

প্রশ্ন: 108914

আমি পুরুষ ডাক্তারের কাছে যাওয়া পছন্দ করি না। মহিলা ডাক্তারের কাছে যাওয়া পছন্দ করি। আমার চেনা একমাত্র দক্ষ মহিলা ডাক্তার খ্রিষ্টান। আমি তার আচরণে স্বস্তি পাই। আমাদের মাঝে কথাবার্তা হয়। আর আমি যখন কারো সাথে কথা বলি তখন আমার মুখে দোয়া চলে আসে। যেমন: ‘আমাদের রব আপনাকে সম্মানিত করুন। আমাদের রব আপনাকে মর্যাদা দান করুন। আমাদের রব আপনাকে বরকত দিন।’ আমার এই দোয়া করা কি সঠিক; নাকি সঠিক নয়?

উত্তর

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর

যিম্মী বা চুক্তিবদ্ধ কাফেরের জন্য দোয়া দুই প্রকার:

প্রথম প্রকার: আখিরাতের সাথে সংশ্লিষ্ট দোয়া: যেমন কাফেরের জন্য জান্নাতে প্রবেশের দোয়া করা কিংবা ক্ষমা ও অনুগ্রহ পাওয়ার দোয়া করা কিংবা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার দোয়া করা অথবা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফায়াত লাভ করার দোয়া করা এবং এ জাতীয় অন্য কোন দোয়া। এ ধরনের দোয়া করা জায়েয নেই। আল্লাহ তায়ালা এমন দোয়া করতে নিষেধ করে বলেছেন: “নবী ও মুমিনদের জন্য শোভনীয় নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা; যদিও তারা আত্মীয়-স্বজন হয় যখন এটা তাদের কাছে সুস্পষ্ট যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।”[সূরা তাওবাহ, আয়াত: ১১৩]

সহীহ মুসলিমে (৯৭৬) আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আমি আমার রবের কাছে আমার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দেননি।

নববী তাঁর ‘আল-মাজমূ’ বইয়ে (৫/১২০) বলেন: “কাফেরের জন্য রহমত প্রার্থনা করা ও তার ক্ষমার জন্য দোয়া করা কুরআনের দ্ব্যর্থহীন দলিল ও ইজমার ভিত্তিতে হারাম।”[সমাপ্ত]

দ্বিতীয় প্রকার: দুনিয়াবী বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট দোয়া। যেমন: অর্থ-সম্পদ ও সন্তান বৃদ্ধি অথবা সুস্থতা কিংবা সৌভাগ্যের জন্য দোয়া করা। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মহান দোয়া হলো তার হেদায়াতের জন্য দোয়া করা। এ ধরনের দোয়া জায়েয এবং এতে কোনো সমস্যা ও পাপ নেই। এটা বেশ কিছু দিক থেকে:

১- এমন দোয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়নি। আর নিষেধের পক্ষে কোনো দলীল না আসা পর্যন্ত জায়েয-ই মূল অবস্থা।

২- সুন্নাহতে বর্ণিত আছে, কাফের যদি স্পষ্ট শব্দে সালাম দেয়, তাহলে তার সালামের জবাব দেওয়া জায়েয। তার সালামের জবাব দেওয়া মূলত তার সুস্থতা ও নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা। অনুরূপভাবে সুন্নাহতে কাফেরের রুকইয়া করাও জায়েয বলা হয়েছে। আর রুকইয়া হল সুস্থতার জন্য দোয়া করা। ইতঃপূর্বে (৬৭১৪)-নং প্রশ্নের উত্তরে সেটার বিবরণ গিয়েছে।

৩- এতে করে কাফেরের মন জয় করার মত কল্যাণ অর্জিত হয়। শরীয়তের উদ্দেশ্যসমূহের মাঝে এটা হলো অন্যতম বিবেচ্য একটি মহৎ কল্যাণ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক অসুস্থ ইহুদি গোলামকে দেখতে গিয়ে ইসলামের দাওয়াত দিলে সে ইসলাম গ্রহণ করে।

৪- সালাফের কারো কারো থেকে এমন দোয়া বর্ণিত হয়েছে। যেমন: উকবা ইবনে আমের আল-জুহানী রাদিয়াল্লাহু আনহু এক লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন যার বেশভূষা মুসলিমের মত। লোকটা তাকে সালাম দেয়। উকবা (রাঃ) সালামের উত্তর দিয়ে বলেন: “ওয়ালাইকা ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহু”। তখন উকবার গোলাম বলল: “সে খ্রিষ্টান।” তখন উকবা উঠে গিয়ে তার পিছু নেন এবং তাকে পাওয়ার পর বললেন: “আল্লাহর রহমত আর বরকত মুমিনদের উপর। তবে আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবী করুন এবং তোমার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিন।”[বুখারী তার ‘আল-আদাবুল মুফরাদ’ বইয়ে (১/৩৮০) হাদীসটি বর্ণনা করেন]

হাসান বসরী বলেন: “যিম্মীকে মৃত্যু শোকের সান্ত্বনা দিতে চাইলে বলবে, তোমার শুধু কল্যাণই হোক।”

ইবনুল কাইয়িম তার ‘আহকামু আহলিয-যিম্মাহ’ বইয়ে (১/৪৩৮) উক্ত বর্ণনা আনার পর অনুরূপ আরো কিছু বর্ণনা উল্লেখ করেন।

৫- ফকীহরা (রাহিমাহুমুল্লাহ) এ ধরনের দোয়া জায়েয বলেছেন। এর পক্ষে কিছু বক্তব্য নিম্নরূপ:

বুহূতী হাম্বলীর ‘কাশ্‌শাফুল ক্বিনা’ (৩/১৩০) বইয়ে আছে:

“তাকে (কাফেরকে) বলা যাবে: আহলান ওয়া সাহলান (শুভেচ্ছা স্বাগতম), আপনার সকালটা কেমন?’ অনুরূপভাবে বলা যাবে: ‘কেমন আছেন?’ মুসলিমের জন্য যিম্মীকে ‘আল্লাহ আপনার প্রতি অনুগ্রহ করুন, আপনাকে হেদায়াত দান করুন (অর্থাৎ ইসলামের মাধ্যমে) বলা বৈধ।’ ইব্রাহীম আল-হারবী ইমাম আহমদকে জিজ্ঞেস করেন: ‘মুসলিম কি যিম্মীকে বলবে ‘আল্লাহ আপনার প্রতি অনুগ্রহ করুন?’ ইমাম আহমদ বলেন: ‘হ্যাঁ; অর্থাৎ ইসলামের মাধ্যমে’।”[সংক্ষেপে সমাপ্ত]

শাফেয়ী মাযহাবের গ্রন্থ ‘নিহায়াতুল মুহতাজ’ টীকাতে (১/৫৩৩) এবং ‘তুহফাতুল মুহতাজ’ এর টীকায় (২/৮৮) এসেছে: “কাফেরের শারীরিক সুস্থতা ও হেদায়াতের জন্য দোয়া করা জায়েয।”[সমাপ্ত]

মুনাওয়ী তার ‘ফাইযুল কাদীর’ বইয়ে (১/৩৪৫) বলেন:

“কাফেরের জন্য হেদায়াত, সুস্থতা ও নিরাপত্তার দোয়া করা যাবে। তবে ক্ষমাপ্রাপ্তির দোয়া করা যাবে না।”[সমাপ্ত]

পূর্বোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে আপনি প্রশ্নে খ্রিষ্টান নারী ডাক্তারের জন্য দোয়া করার ভাষ্যগুলো উল্লেখ করেছেন: : “আল্লাহ আপনার প্রতি অনুগ্রহ করুন, আল্লাহ আপনাকে মর্যাদা দান করুন।” এতে কোনো সমস্যা নেই। এতে আপনি এর দ্বারা উদ্দেশ্য করছেন যে, আল্লাহ তাকে ইসলামের মাধ্যমে অনুগ্রহ করুন ও মর্যাদা দান করুন।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে: একজন মুসলিম কি খ্রিষ্টানকে বলতে পারবে: “আল্লাহ আপনার প্রতি অনুগ্রহ করুন?” তিনি উত্তর দেন: “হ্যাঁ। বলতে পারবে: আল্লাহ আপনার প্রতি অনুগ্রহ করুন; অর্থাৎ ইসলামের মাধ্যমে।”

ইবনু মুফলিহ-এর রচিত ‘আল-আদাব আশ-শরইয়্যাহ’ (১/৩৬৯)।

আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

সূত্র

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

টেক্সট ফরম্যাটিং অপশন

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android