প্রশ্ন:
আমি একজন মুসলিম নারী। আমি নিয়মিত তারাবী সালাত আদায় করি। আমি যদি সালাত আদায় করতে মসজিদে না যাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমার ছোট ভাই সেও মসজিদে যায় না। মসজিদে গেলে আমরা ইমামের সাথে বিতিরের সালাত আদায় করি। আমি শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় ও কুরআন তিলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তুলেছি। তবে বিতিরের সালাত আদায় করার পর তো আর তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতে পারি না। এখন আমার ক্ষেত্রে কোনটি বেশি ভাল? তারাবীর সালাত আদায় করতে মসজিদে যাওয়া যাতে আমার ভাই মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করতে পারে। নাকি বাসায় থেকে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা। এই দুইটির মধ্যে কোনটিতে বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে?
যিনি শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করতে চান তিনি কি ইমামের সাথে বিতিরের নামায পড়বেন?
প্রশ্ন: 65702
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
সমস্তপ্রশংসাআল্লাহরজন্য।
আপনারমসজিদে যাওয়া,তারাবীনামাযের জামাতেউপস্থিত হওয়া,মুসলিমবোনদের সাথেদেখা-সাক্ষাত করা ইত্যাদি সবই ভাল আমল; আলহামদুলিল্লাহ।এবং আপনারভাইকে ভালকাজে সহায়তা করা এটা আরো একটি ভালআমল।আপনার এইআমলগুলো পালনকরা ও শেষ রাতেতাহাজ্জুদ নামায আদায় করার মাঝে তোকোন সংঘর্ষনেই। আপনারপক্ষে এ ফজিলতপূর্ণকাজগুলোরমাঝে সমন্বয়করা সম্ভব।
এক্ষেত্রেদুটো পদ্ধতিহতে পারে:
প্রথমত:আপনি ইমামেরসাথে বিতিরেরনামায আদায় করে ফেলবেন।তারপর দুইরাকাত রাকাতকরে আপনার সুবিধামতযত রাকাতসম্ভব তাহাজ্জুদ নামায আদায়করে নিবেন। তবেবিতিরেরসালাতপুনরায়পড়বেন না। কারণএক রাতেদুইবার বিতির পড়া যায় না।
দ্বিতীয়ত:আপনি বিতিরেরনামায শেষ রাতেরজন্যরেখে দিবেন।অর্থাৎ ইমামযখন বিতিরেরসালাত আদায়শেষে সালামফিরাবেন তখনআপনি সালাম নাফিরিয়েদাঁড়িয়েযাবেন এবংঅতিরিক্ত একরাকাত যোগকরবেন যাতেশেষ রাতে আপনি বিতিরআদায় করতেপারেন।
শাইখইবনে বাযরাহিমাহুল্লাহকেপ্রশ্ন করাহয়েছিল: ইমামবিতিরেরসালাত আদায়শেষ করলে কিছুমানুষদাঁড়িয়ে যায়এবং অতিরিক্তএক রাকাত যোগকরে যাতেশেষরাতে তিনিবিতিরপড়তে পারেন। এই আমলের হুকুমকি? এতে কিতিনি “ইমামেরসাথে সালাতসম্পন্ন করেছেন” ধরা যাবে?তিনিউত্তরে বলেন: “আমরাএতে কোন দোষদেখি না। আলেমগণএটাপরিষ্কারভাবেবলে দিয়েছেন।তিনি এটাকরেন যেনবিতির (বেজোড়)নামাযটা শেষ রাতেইআদায় করতেপারেন। তাঁরক্ষেত্রে একথা বলাও সত্যহবে যে, “ইমামশেষ করাপর্যন্ত তিনিইমামের সাথেনামায আদায়করেছেন”। কারণইমামনামায শেষ করাপর্যন্ত তিনিতো ইমামের সাথেক্বিয়ামকরেছেন এবং এরপর তিনি একরাকাত যোগকরেছেনঅন্য একটি শরয়ি কল্যাণেরকারণে।সেটা হলো-বিতির(বেজোড়)নামাযটা যাতেশেষ রাতেআদায়করা যায়। তাইএতে কোনসমস্যা নেই। অতিরিক্ত এরাকাতেরকারণেএ ব্যক্তি ‘যারাইমামের সাথেশেষ পর্যন্তনামায পড়েছেন’তাদের দল থেকেবের হয়ে যাবেনা। বরং তিনিতো ইমামেরসাথে সম্পূর্ণনামায আদায়করেছেন।তবে ইমামেরসাথে নামাযশেষ করেননি;কিছুটা বিলম্বেশেষ করেছেন।”সমাপ্ত
[মাজমূফাতাওয়াইবনে বায (১১/৩১২)]
শাইখইবনে জিবরীনহাফিজাহুল্লাহকেএই প্রশ্নেরমত একটি প্রশ্নকরা হয়েছিল,উত্তরে তিনিবলন: “মুক্তাদিরক্ষেত্রেউত্তম হলইমামেরঅনুসরণ করা,যতক্ষণপর্যন্ত নাতিনি তারাবী ও বিতির নামাযশেষ করেন। যাতে করেতার ক্ষেত্রেএই কথা সত্যহয় যে তিনিইমামের সাথে ইমাম শেষ করাপর্যন্তসালাত আদায়করেছেনএবং তারজন্যসারারাতক্বিয়াম করারসওয়াব লেখা হয়; যেমনটিইমাম আহমাদ ওঅন্যান্য ‘আলেমগণ হাদিসরেওয়ায়েত করেছেন।”
এরউপর ভিত্তিকরে বলা যায়যে, যদি তিনি তাঁর(ইমামের) সাথেবিতির নামায আদায়করেন তবেশেষ রাতে বিতির নামায আদায়করার প্রয়োজন নেই।যদি তিনি শেষরাতে উঠেন তবে তিনি তারজন্য যতরাকাত সম্ভব তাজোড় সংখ্যায়(অর্থাৎ দুইদুই রাকা‘আতকরে) আদায়করবেন। বিতিরেরপুনরাবৃত্তিকরবে না, কারণএক রাতেদুইবার বিতির হয় না।
আরকিছু আলেমইমামের সাথেবিতিরকেজোড়বানিয়ে(অর্থাৎ একরাকাত যোগকরে) পড়াকে উত্তমহিসেবে গণ্যকরেছেন। তা হলএভাবে যেইমাম সালামফিরানো শেষে তিনিঅতিরিক্ত একরাকাত সালাতআদায় করেতারপর সালামফিরাবেন এবংবিতিরের নামায শেষরাতেতাহাজ্জুদেরসাথে পড়ারজন্য রেখে দিবেন । এর দলীল হচ্ছে- নবীসাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরবাণী :
( فَإِذَاخَشِيَأَحَدُكُمْالصُّبْحَصَلَّىرَكْعَةًوَاحِدَةًتُوتِرُلَهُمَاقَدْصَلَّى) “
“আপনাদেরমধ্যে কেউ ফজরহয়ে যাওয়ারআশংকা করলেআদায় করাসালাতের সাথেএক রাকাত বিতির পড়েনিবেন।”
তিনিআরও বলেছেন :
( اجْعَلُواآخِرَصَلاتِكُمْبِاللَّيْلِوِتْرًا
“আপনারাবিতিরের(বেজোড়ের)মাধ্যমে আপনাদেররাতেরসালাতসমাপ্ত করুন।”সমাপ্ত[ফাতাওয়ারমজান (পৃঃ ৮২৬)]
আল-লাজ্নাদ-দায়িমা দ্বিতীয়ব্যাপারটিকে উত্তম বলেফতোয়াদিয়েছে।
[ফাতাওয়াল্লাজনাহ আদ্দায়িমা(ফতোয়া বিষয়কস্থায়ীকমিটিরফতোয়াসমগ্র) (৭/২০৭)]
আমরাআল্লাহরকাছে আপনারজন্য তাওফিক ওদ্বীনিঅটলতার দোয়া করছি।আল্লাহইসবচেয়ে ভালজানেন।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব