0 / 0

ভাইদের বিয়ের সময় সে খরচ দিয়েছে এখন তার বাবা পরিত্যক্ত সম্পত্তির কিছু অংশ তাকে লিখে দেয়া কি ঠিক হবে?

প্রশ্ন: 200668

আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, জনৈক ব্যক্তি তার চার বোনের বিয়েতে সাহায্য করেছে যাতে করে, পিতার কোন সম্পত্তি বিক্রি করতে না হয়। এখন তার পিতা কি তাকে নিজের সম্পত্তির একটা অংশ লিখে দিতে পারেন? এক্ষেত্রে কি বোনদের সম্মতি নিতে হবে? নাকি বোনদের সম্মতি ছাড়া পিতা নিজেই লিখে দিতে পারেন? যদি কোন কোন বোন তাদের ভাইকে এ সম্পত্তি দিতে সম্মতি না দেয় তাহলে পিতা লিখে দিলে তিনি কি গুনাহগার হবেন? পিতা যদি এমন কিছু লিখে দেয়ার আগে মারা যান সেক্ষেত্রে পরিত্যক্ত সম্পত্তি কি সবার সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে? নাকি ছেলে তার বোনদের জন্য যা খরচ করেছে সেটা নিয়ে নিতে পারে; এরপর অবশিষ্ট সম্পত্তি বণ্টন হবে?

উত্তর

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

কোন সন্দেহ নেই যে, ভাই তার বোনদেরকে বিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে যে দায়িত্ব পালন করেছে সেটা ভাল কাজ, সওয়াবের কাজ। এ ভাই যে কাজটি করেছে এ কাজের দুটো সম্ভাবনা রয়েছে:

এক. সে তার বোনদেরকে বিয়ে দেয়ার জন্য যে খরচটি দিয়েছে সেটা কোন বিনিময়ের উদ্দেশ্য ছাড়া সওয়াবের নিয়তে তার পিতাকে সহযোগিতা করেছে অথবা তার বোনদের প্রতি অনুগ্রহ ও আত্মীয়তার হক স্বরূপ করেছে। এ অবস্থায় সে ছেলের জন্য তার পিতার কাছ থেকে কিংবা তার বোনদের কাছ থেকে সে যা খরচ করেছে সেটার বিনিময় চাওয়া জায়েয হবে না। এটা সরাসরি পিতার কাছ থেকে চাওয়া যেমন জায়েয হবে না; তেমনি পিতার মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকেও চাওয়া জায়েয হবে না। কারণ সে এ খরচ অনুগ্রহ ও উপঢৌকনস্বরূপ করেছে; বিনিময় স্বরূপ করেনি। সহিহ বুখারি (২৫৮৯) ও সহিহ মুসলিমে (১৬২২) এসেছে- ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “উপঢৌকন দিয়ে যে ব্যক্তি ফেরত চায় সে ব্যক্তি ঐ কুকুরের মত যে কুকুর বমি করে আবার সে বমি খায়”।

এবং পিতার জন্যেও তাকে তার সে অবদানের কারণে পক্ষপাতিত্ব করে কোন কিছু উপঢৌকন দেয়া জায়েয হবে না। কারণ সন্তান সে খরচটি অনুগ্রহ ও উপঢৌকন হিসেবে করেছে। তাই অন্য বোনদের বাদ দিয়ে শুধু তাকে বেশি অংশ দেয়ার কোন কারণ নেই।

ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন: কোন কিছু প্রদানে সন্তানদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা ব্যক্তির উপর ফরজ। যদি তাদের কারো সাথে এমন কোন কারণ সংশ্লিষ্ট না হয় যার ফলে কোন সন্তানকে অতিরিক্ত কিছু দেয়াটা বৈধ হয়। তাই কেউ যদি তার সন্তানদের কাউকে বিশেষ কিছু উপঢৌকন দেয় কিংবা কিছু দেয়ার ক্ষেত্রে সন্তানদের মধ্যে তারতম্য করে এতে করে সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে। এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তির উপর দুইটি অপশনের কোন একটি পালন করা ফরজ। যে সন্তানকে অতিরিক্ত কিছু দেয়া হয়েছে তার থেকে সেটা ফেরত আনা। অথবা অন্যদেরকেও সমপরিমাণ অংশ বাড়িয়ে দেয়া। তাউস বলেন: “সন্তানদের মধ্যে তারতম্য করা নাজায়েয; এমনকি একটি পোড়া রুটির মাধ্যমে হলেও”। ইবনুল মোবারকও এ অভিমত ব্যক্ত করেন। মুজাহিদ ও উরওয়া থেকেও অনুরূপ অভিমত বর্ণিত আছে।[আল-মুগনি (৫/৩৮৭)থেকে সমাপ্ত]

22169 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখুন।

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে (১৬/২০৭) জিজ্ঞেস করা হয় যে, আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং জানি যে, মৃত্যু এমন একটি সত্য যা থেকে কোন গত্যন্তর নেই। আমার মা ছোট্ট একটি বাড়ীর মালিক। আমি বাড়িটি নতুন করে বানিয়েছি। আমার এক ভাই আছে যে আমার সাথে কোন কিছুতে অংশ গ্রহণ করেনি। সে আমার মা-বাবাকে চরম রাগিয়ে দেয় এবং আজীবন সে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে আসছে। এখন সে বাড়ীর বাইরে থাকে। তাই আমার মা রাগ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, বাড়ীটি আমার নামে লিখে দিবেন। আমি মাকে অনেক বুঝাতে চেষ্টা করেছি; কিন্তু তিনি বাড়ীটি আমাকে লিখে দিতে বদ্ধপরিকর। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে- আমার মা আমার ভাইকে বঞ্চিত করে বাড়ীটা আমার নামে লিখে দিলে কি তিনি গুনাহগার হবেন? আমার কোন গুনাহ হবে কিনা যদি আমি মায়ের কাছ থেকে বাড়ীটি গ্রহণ করি।

জবাবে তাঁরা বলেন:

প্রশ্নে যে বাস্তবতার কথা উল্লেখ করা হল তাতে আপনার মায়ের এ বাড়ীটি আপনার ভাইকে বাদ দিয়ে আপনাকে দিয়ে দেয়া জায়েয হবে না। এর দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “আল্লাহকে ভয় করুন, সন্তানদের মাঝে ন্যায়বিচার করুন।” এ অর্থবোধক আরও অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এরপরও তিনি যদি এ কাজটি করেন -যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে- তাহলে তিনি গুনাহগার হবেন এবং আপনিও গুনাহগার হবেন সেটি গ্রহণ করে অন্যায় ও সীমালঙ্ঘনের কাজে অংশগ্রহণ করার কারণে। আল্লাহ তাআলা যা করতে নিষেধ করেছেন, তিনি বলেন: “তোমরা নেক ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা কর; পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কেউ কাউকে সহযোগিতা করো না।” আপনার মায়ের উপর ফরজ- এ উপঢৌকনটি ফিরিয়ে নেয়া কিংবা দ্বিতীয় সন্তানকেও সমমানের উপঢৌকন দেয়া। আর আপনি যদি দেখেন যে, আপনার মা দ্বিতীয় সন্তানকে ভাগ দিতে উপর্যুপরি নারাজ সেক্ষেত্রে আপনি উপঢৌকনটি গ্রহণ করে আপনার ভাইকে অর্ধেক দিয়ে দিতে পারেন; যদি আপনার মায়ের আর কোন সন্তান না থাকে; যাতে করে আপনি নিজে গুনাহ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।

স্থায়ী কমিটি

সদস্য- আব্দুল্লাহ বিন কুয়ুদ, সহ-সভাপতি-আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, সভাপতি- আব্দুল আযিয বিন বায

দুই.

এ ভাই তাদের জন্য যে খরচটি করেছে সে খরচ পরবর্তীতে পাওয়ার নিয়তে করেছে। এক্ষেত্রে পিতা তাকে তার সম্পদ থেকে দিতে পারেন কিংবা সে যে পরিমাণ সম্পদ খরচ করেছে সে পরিমাণ সম্পদ তার জন্য অসিয়ত করে যেতে পারেন; যদিও অন্য ভাইদেরকে সে পরিমাণ সম্পদ না দিয়ে থাকুক এবং অন্য ভাইয়েরা এ অর্থ প্রদানে সন্তুষ্ট না হোক। কেননা এ ক্ষেত্রে পিতা তাকে যা দিচ্ছেন সেটা হেবা বা উপঢৌকন নয়; কিংবা অন্যদের চেয়ে তাকে বেশি দেয়া নয়। বরং এটি এক প্রকার ঋণ এবং ঋণ প্রদানকারীকে তার অধিকার অনুযায়ী বিনিময় দেয়া।

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

আমার পিতার বয়স প্রায় ৭৫ বছর।  তিনি এখনো জীবিত আছেন। আমার বাবার একটি পুরাতন মাটির ঘর আছে। ঘরটি সুন্দর জায়গায়। আমি ঘরটি ভেঙ্গে নিজের খরচে শক্ত কংক্রিট দিয়ে নতুন করে বানিয়েছি। আমি বাড়ীটি ভাড়া দিয়েছি। ভাড়ার টাকা দিয়ে এখনো আমি পাওনাদারদের ঋণ পরিশোধ করি; যারা টাকা পাবে। উল্লেখ্য আমি বাড়িটি বানানোর জন্য ‘হাউজিং ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ থেকে ঋণ গ্রহণ করিনি। আমার পিতা চাচ্ছেন তিনি এ বাড়ীটি আমার কোন এক ছেলেকে দিয়ে দিবেন। যে ছেলেটির বয়স কমপক্ষে সাতবছর। উল্লেখ্য, আমার বাবার সন্তানদের মধ্যে আমি ও পাঁচ বোন আছে। বাবার এক মেয়ে আমার চেয়ে বড়; বাকীরা আমার চেয়ে ছোট। আমি কমপক্ষে ১৫ বছর যাবৎ আমার পিতা-মাতার খরচ চালিয়ে যাচ্ছি।

জবাবে তারা বলেন: আপনি যা কিছু উল্লেখ করেছেন সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, আপনার পিতা যে বাড়ীটি আপনার ছেলেকে দিতে চাচ্ছে বর্তমানে সে ছেলের বাড়ীর কোন প্রয়োজন নেই্। আরও দেখা যায়, আপনি আপনার পিতাকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি যদি বাড়ীটি আপনার ছেলেকে দেন তাহলে আপনি এর পরিবর্তে আপনার নিজের খরচে আপনার ভাইদেরকে একটি বাড়ি বানিয়ে দিবেন। আপনার বিবাহিতা পাঁচজন বোন আছে। ইতিপূর্বে আপনি আপনার পিতার বাড়িটি নিজের খরচে নির্মাণ করেছেন; যে বাড়িটি তিনি আপনার ছেলেকে দিতে চাচ্ছেন। এতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, উদ্দেশ্য হচ্ছে এ বাড়ীটি আপনাকে দেয়া; আপনার বোনদেরকে বাদ দিয়ে। কিন্তু দেয়ার সময় আপনার ছেলের নামে দেয়া হচ্ছে- কৌশলগত কারণে। এ কারণে আপনার পিতার জন্য এ বাড়িটি আপনার ছেলেকে দেয়া জায়েয হবে না। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সন্তানদের মাঝে ন্যায়বিচার কর”। পক্ষান্তরে, আপনি যা উল্লেখ করেছেন যে, আপনি আপনার পিতার পরিবারের জন্য খরচ করতেন সে খরচের সময় আপনার মনে যদি থাকে ‘দান’ তাহলে আল্লাহ আপনাকে প্রতিদান দিবেন। আপনি আপনার পিতার কাছে এ অর্থ আর দাবী করতে পারবেন না।

আর যদি আপনি পরবর্তীতে উসূল করার নিয়তে খরচ করে থাকেন তাহলে আপনি আপনার পাওনা পাবেন। তবে, উত্তম হচ্ছে- বাপের সাথে হিসাব-নিকাশ না করা এবং বাপের জন্য যা খরচ করেছেন সেটাকে বড় কোন সম্পদ মনে না করা। আপনি আল্লাহর কাছে আপনার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি প্রতিদান পাবেন; যদি আপনি আল্লাহর সাথে বিশ্বস্ত হয়ে থাকেন। আল্লাহই উত্তম তাওফিকদাতা। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবীবর্গের প্রতি আল্লাহর রহমত ও  শান্তি নাযিল করুন।

গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি

সদস্য- আব্দুল্লাহ বিন কুয়ুদ, সহ-সভাপতি- আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, সভাপতি- আব্দুল আযিয বিন বায।

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android